Shaswata's Blog

Things came to my mind, which I write here (sometimes).

পথিক

চন্দ্রগ্রস্থ

বহুকাল পর সেই গ্রামের পথে পা বাড়ায় পথিক,
চেনা চেনা লাগছে তার কাছে।
ব্যতিক্রম হিসেবে কিছু দূর পর পর সড়কবাতি,
রাতে চলতে সুবিধে হবে।

একটি পুরোনো বাড়ির সামনে দাঁড়ায় সে,
অনেক চেনা বাড়ি তার।
মধ্যরাত। সবাই ঘুমাচ্ছে ভেতরে, একটি কুকুর চিনতে পায় তাকে,
পথিককে সে সঙ্গ দেয় আবার!

বাড়িটির বয়স দেড়শ এর বেশি হবে,
এতো পুরোনো কাঠের খুঁটি ধরে সে কিছুই বুঝতে পারেনা।
ঘরের ভেতর এক বৃদ্ধাকে দেখে সে,
পথিক তাকে চিনতে পারলেও বৃদ্ধা পারলোনা।

পথিক বাইরে আসে, দেখে চন্দ্রগ্রস্থ রাত।
শুনতে পায় দূর থেকে ভেসে আসা বিদেশি ভাষা,
সে বুঝেনা কি এর মর্ম কথা,
সে জানে এককালে মধ্যরাতে এখানে হতো যাত্রাপালা।

বিধবা বৃদ্ধাটি বড্ড একা,
ঘর থেকে বের হতে পারেনা সে, পারেনা ঠিকমতো খেতে।
কুচকানো চামড়ায় সে অপেক্ষা করে তার গন্তব্যের,
এ যাত্রা বড় অসহনীয় তার কাছে।

পথিক বনে এসে স্থির হয়ে যায়।
পুকুরটা কাটা হয়না অনেকদিন, বাঁশঝাড় টা হেলে পড়েছে এক পাশে।
পথিক কোনো গন্ধ পায়না,
পথিক কোনো স্বাদ পায়না,
পথিক কোনো সুখ-দুঃখ বোঝেনা,
পথিক আসলে যাযাবর।
তবুও পথিক পূর্বপুরুষের অস্তিত্ব টের পায় বনের মাটিতে।

পথিক আবার আকাশের দিক তাকায়,
দেখে পূর্ণিমার আর একদিন বাকি।
পথিক ঘরে যায়, কিছুক্ষন বসে বৃদ্ধার সামনে,
তাকে আবার যেতে হবে নাকি!

কারণ সে পথিক,
সে আসলে যাযাবর।
তার কোনো ঘর নেই,
তার কোনো অনুভূতি নেই,
তার দিয়ে যাওয়ার মত কিছু নেই,
স্বয়ং বিধাতার কাছে ত্যাজ্য সে।

পথিক বিদায় নেয়,
শুধু বৃদ্ধা নয়, সকল পূর্বপুরষদের কাছ থেকে।
সে জানে, তাকে যেতে হবে অনেক দূর,
কারণ সে পথিক, সে আসলে যাযাবর।
উইথড্রয়াল এর কারণে সে ভুগছে অস্তিত্ব সংকটে,
তার কোনো বোধশক্তি নেই, তবুও তার চশমার কাঁচ ঘোলা হয়ে যায়।